ভারতকে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১১ এএম
ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী: বিএসএফ-এর গুলি করে বাংলাদেশী হত্যা, ধরে নিয়ে যাওয়া ও নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন সহ্য করতে না পেরে ভারত বাংলাদেশের উপর যেন আরো প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছে। হাসিনা-মোদি মিলে অন্তর্বর্তী সরকারকে শুরু থেকেই ব্যর্থ করে দেয়ার বহু ষড়যন্ত্র করেছেন। সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা বলে বাংলাদেশকে নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা থেকে শুরু করে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। বিষয়টি এমন, পারলে সে বাংলাদেশকে গিলে খেত। তা করতে না পেরে, বিভিন্ন কল্পিত ও তার সৃষ্ট ইস্যুতে সে নানা উসকানিমূলক ও অকূটনৈতিকসুলভ বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা বিনষ্ট করছে। বাংলাদেশের সাথে মোদির যে আচরণ, তা অপরিণত ও অপরিপক্ক। তিন রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের, জনগণের সাথে জনগণের সম্পর্কের চেয়ে ব্যক্তি শেখ হাসিনার সাথে সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এর প্রমাণ পাওয়া যায়, শেখ হাসিনার পতন ও পালিয়ে যাওয়ার পর তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আশ্রয় দেয়া থেকে। বাংলাদেশ ও তার জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেয়ে পতিত শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষাকেই মোদি সরকার অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। একই সঙ্গে একটির পর একটি ঘটনা ঘটাচ্ছে ও নানা পন্থায় উসকানি দিচ্ছে। এর মধ্যে সীমান্ত হত্যা অন্যতম।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা নিয়ন্ত্রণ, আমদানি-রফতানি কমিয়ে দেয়া, বিএসএফের সীমান্তে হত্যা-নির্যাতন বৃদ্ধি, সমুদ্রসীমা থেকে জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়াসহ নানাভাবে বাংলাদেশের প্রতি তার বিদ্বেষ ও ক্রোধ ঢেলে দিচ্ছে। গত ১ সেপ্টেম্বর সিলেটের মৌলভীবাজার সীমান্তে ১৩ বছরের এক শিশুকে বিএএসএফ গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ ঘটনা বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়, যা ফেলানি হত্যাকা-ের সাথে তুলনীয়। কয়েকদিন আগে পরশুরামে মুহুরী নদী থেকে পাম্প দিয়ে কৃষকরা পানি তুলতে গেলে বিএসএফ বাধা দেয়। অথচ এ নদী থেকে গত অর্ধ শতাব্দী ধরে কৃষকরা কৃষিকাজে পানি ব্যবহার করছে। দেখা যাচ্ছে, ভারত ব্যক্তি শেখ হাসিনার জন্য বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ককে দূর দিগন্তে ঠেলে দিচ্ছে। মুখে মুখে দ্বিপাক্ষিক সুসম্পর্ক অব্যাহত রাখার কথা বলছে, কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। কয়েক দিন আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশে এসেও কূটনৈতিক ভাষায় কথা বলে গেছেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূতও একইভাবে সম্পর্ক উন্নয়নের কথা বলছেন। বাস্তবে নানা উসকানিমূলক ঘটনা প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। বলা বাহুল্য, মোদির ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতি কথার কথা ছাড়া কিছু নয়। এখন তার চারপাশের সব প্রতিবেশী ভারতকে ‘হোস্টাইল এনিমি’ হিসেবে গণ্য করছে। হাসিনাকে বশংবদ বানিয়ে বাংলাদেশের সাথে সে অঙ্গরাজ্যের মতো আচরণ করেছে। হাসিনার পতনে তার সে আশা হারিয়ে গেছে। এখন ক্ষুব্ধ হয়ে বাংলাদেশের সাথে বিরূপ আচরণ করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক কোনো রীতি-নীতির তোয়াক্কা করছে না। সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে না। অবশ্য হাসিনা ক্ষমতায় থাকতেই সে তা করেনি, বরং আরও বেশি সীমান্ত হত্যা, নির্যাতন বাড়িয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর বিএসএফ ৩১ বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে ২৮ জনকেই গুলি করেছে। ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে ৫২২ জনকে হত্যা করেছে। এসবই ঘটেছে ভারতের সেবাদাসী ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে। বাংলাদেশের সাথে ভারতের স্থলসীমান্ত প্রায় ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার। এটি বিশ্বের দীর্ঘতম স্থলসীমান্ত। একে সবচেয়ে রক্তাক্ত সীমান্ত বলা হয়। বিশ্বের আর কোনো দেশের সীমান্তে এত হত্যাকা- হয় না। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, ভারতীয় বাহিনী কীভাবে পাখির মতো গুলি করে বাংলাদেশীদের হত্যা করে। এিিট কোনোভাবেই প্রতিবেশিসুলভ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পরিচায়ক নয়।
ভারত বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায় বলে মুখে মুখে বললেও তার কোনো দৃষ্টান্ত এখন পর্যন্ত স্থাপন করতে পারেনি। সে সীমান্ত হত্যা ও সম্পর্ক অবনতির উসকানিমূলক বক্তব্য এবং ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। একদিকে প্রতিবেশী দেশের জনগণকে গুলি করে হত্যা করছে, অন্যদিকে সুসম্পর্কের কথা বলছে, যা কোনোভাবেই বন্ধুত্বের নিদর্শন নয়। ভারত যদি এখনও একপেশে চোখ দিয়ে বাংলাদেশকে দেখে, তাহলে তা হবে ভুল। বাংলাদেশ এখন আর তার মদদপুষ্ট হাসিনার স্বৈরশাসনের মধ্যে নেই। এ এক নতুন বাংলাদেশ। ফলে ভারতকে নতুন বাংলাদেশের সাথে তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে সমস্বার্থমূলক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হবে। একতরফা নীতি বা দাদাগিরির আর কোনো সুযোগ নেই। দুই দেশের জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত করতে ভারতকে অহমিকাবোধ পরিহার করতে হবে। গুলি করে বাংলাদেশীদের হত্যা ও নির্যাতন করলে তা সুসম্পর্কের ক্ষেত্রে দেয়াল হয়েই থাকবে। সম্পর্কের উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারতকে সীমান্তে হত্যা ও বাড়াবাড়ি আচরণ বন্ধ করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তে যে হত্যা ও ভারতের উসকানিমূলক ঘটনা ঘটছে, সেসব এলাকায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বিজিবি কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের সরজমিনে পরিদর্শন করা উচিৎ। এতে তারা বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে এবং সে অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবেন।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কে হবেন বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার?
বোলারদের নৈপুণ্যে অল্প টার্গেটেও স্বপ্ন দেখছে পাকিস্তান
৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামোর বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে: আমিনুল হক
পিরোজপুর প্রেসক্লাব নির্বাচন শামীম সভাপতি ও তানভীর সম্পাদক
বিরক্তিকর সময়কে গুডবাই বলুন! এন্টি ডোট হিসেবে সেরা অ্যাপ (পর্ব-১)
দেশের বিরাজমান সংকট উত্তরণে জাতির আস্থা তারেক রহমান : মীর হেলাল
টোল প্লাজায় দুর্ঘটনা: বাসের ব্রেকে সমস্যা ছিল, চালক নেশা করতেন
পাবনার আমিনপুরে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আগুন, শঙ্কিত পরিবার
দেশে এলো ভিভোর নতুন ফ্ল্যাগশিপ এক্স২০০
বিএনপির দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হলে কাউকে ছাড় নয়: শাহ সুলতান খোকন
সচিবালয়ে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের জন্য বিশেষ সেল গঠন
যুদ্ধের দামামা, তালেবানের পাল্টা হামলায় ১৯ পাকিস্তানি সেনা নিহত
ফিরে দেখা ২০২৪: ফুটবলে ঘটনাবহুল বছর
বড় চমক অ্যাপলের, জ্বর ও হার্ট অ্যাটাকের আগেই সতর্ক করবে ইয়ারবাডস
রাস্তাটি সংস্কার করুন
থার্টি ফাস্ট নাইট এবং প্রাসঙ্গিক কথা
ইসলামী শক্তির সম্ভাবনা কতটা
কিশোরগঞ্জে দুই নারীর রহস্যজনক মৃত্যু, গ্রেফতার-১
সাধারণ মানুষের স্বস্তি নিশ্চিত করা জরুরি
দেশের পরিস্থিতি ঠিক না হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা